
লাল বাতিটা জ্বলছে নিভছে ক্রমশ! লক্ষণ সুবিধার না। মহাকাশযানের নিয়মাবলি অনুযায়ী লাল বাতি তখনই জ্বলবে যখন মহাকাশযান নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। স্পেস-ক্যাপ্টেন রিবি তা জানে৷ সে কিছুদিন হলো আন্ত-গ্যালাক্টিক মহাকাশযান চালনার লাইসেন্স পেয়েছে। এটাই তার প্রথম আন্ত-গ্যালাক্টিক মিশন। এর জন্য ১০ বছর ট্রেনিং নিতে হয়েছে তাকে। অন্তঃ-গ্যালাক্টিক মহাকাশযান পরিচালনা করেছে অনেক বিগত দশ বছরে। খুব সফলতার সাথে একটি নিযন্ত্রণ হারানো যাত্রীবাহী মহাকাশযানকে সে বৃহস্পতির ওপর অবতরণ করিয়েছে! এর পরপরই মহাকাশ সংস্থাগুলোর নজর কাড়ে সে এবং যে লাইসেন্স পেতে নূন্যতম
১৫-২০ বছর লাগে তা সে ১০ বছরের মাথায় পেয়ে যায়! তার প্রথম মিশন পড়ে সৌরজগতের পার্শ্ববর্তী গ্যালাক্সির গ্রহগুলোর ওপর সার্ভে করা। মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীদের ধারনা সেসব গ্রহগুলোর ভূগর্ভে তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম টুথার্টিফাইভ এর খনি রয়েছে! সেখান থেকে যদি তা উত্তোলন করা এবং তা হতে শক্তি উৎপাদন সম্ভব হয় তাহলে বিদ্যুৎ এর জন্য পৃথিবী কিংবা চাঁদের পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ওপর চাপ-নির্ভরশীলতা কমে আসবে। এই প্রথম কোন মানব বহনকারী মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে সে গ্যালাক্সীর উদ্দেশ্যে। জি-৩০ মহাকাশযানটি মূল নিয়ন্ত্রণ 'গিমিস' নামক একটি এন্ড্রয়েডের হাতে। সহকারী পাইলট হলো রিবি। মহাকাশযানটি ৫ম প্রজন্মের এবং এর বেশ শক্তিশালী বায়ো-ইঞ্জিন রয়েছে যা দিয়ে সে আলোর চেয়েও ৫গুন গতিতে যাত্রা করতে পারে। এতক্ষণ পর্যন্ত বেশ ভালোই চলছিলো। গিমিসও বেশ হাসিখুশিভাবে রিবির সাথে কথা বলছিলো। কিন্তু হঠাৎই সাইরেনের মত একটা আওয়াজে লাল বাতি জ্বলে ওঠে! মানে মহাকাশযান নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।
কিন্তু কেন হলো সেটাই বুঝতে পারছে না রিবি। সে বার বার কন্ট্রোল প্যানেলের সঙ্গে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে কিন্তু পারছে না। সে যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে, ঠান্ডা মাথায় ভাবার চেষ্টা করছে কিন্তু তার মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে আছে। রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে তার। কিছুতেই সে স্বাভাবিক হতে পারছে না।
এমন সময় গিমিস তার যান্ত্রিক কন্ঠে বলল, "সময় কম!"
রিবি চমকে উঠলো! কাঁপা কাঁপা গলায় বলল," এখন কি কিছুই করণীয় নেই?কেন এমনটা হচ্ছে ধরতে পেরেছো?"
গিমিস বলল,"আমরা সম্ভবত কোন বড় নিউট্রন তারকার বলয়ে ঢুকে পরেছি, এখন তার দিকেই ধাবিত হচ্ছি। ক্রমশ আমাদের মহাকাশযানের ত্বরণ বাড়ছে! এভাবে বাড়তে থাকলে একসময় এটা বিস্ফোরিত হয়ে যাবে!"
এই কথাগুলো গিমিস এত স্বাভাবিকভাবে বলল যেন এ নিত্যদিনের ব্যাপার!
রিবি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল," তার মানে তুমি বলছো মৃত্যু ছাড়া আমাদের কোন পথ নেই?"
"বিচলিত হবেন না ক্যাপ্টেন! বিচলিত হবার সময় না এটা।"
"তুমি বলছো বিচলিত হবো না? আমরা মৃত্যুর সম্মুখীন আর বিচলিত হব না? আর তুমিই বা এত স্বাভাবিক ভঙ্গি করে আছো কিভাবে?"
"আমি সামান্য এন্ড্রয়েড। আমার মাঝে বিচলিত হবার প্রোগ্রাম নেই। আমাকে শুধু মহাকাশযান চালনার জন্যই দেয়া হয় নি বরং আপনাকে সঙ্গ দেয়ার জন্যও দেয়া হয়েছে। "
"খুব ভালো সঙ্গ দিচ্ছ আমায়! মৃত্যুর সময় এমন সঙ্গ যেন শত্রুরও না জোটে!"
এদিকে চূড়ান্ত গণনা শুরু হয়েছে! যান্ত্রিক একটা স্বর গুনতে শুরু করেছে, ৫৮...৫৭...৫৬...৫৫...
রিবি বুঝতে পারলো তার সময় ফুরিয়ে এসেছে! সে তার গলায় ঝোলানো লকেটটা চোখের সামনে মেলে ধরলো। তার মায়ের ছোট একটা ছবি লকেটে।সে আলতো করে মায়ের ছবিটা স্পর্শ করলো। তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে! যান্ত্রিক স্বরটা বেরসিকের মত গুণেই যাচ্ছে ২২...২১...২০...১৯...
গিমিস ভাবলেশহীন স্বরে বলল, "আপনি যদি চান তো আপনাকে শীতল ক্যাপসুলে ঘুম পারিয়ে দিতে পারি। আপনার মৃত্যু হবে ঘুমের মাঝে। সব মহাকাশযানেই এ ব্যবস্থা থাকে।"
"জীবনের শেষটুকু আমি আমার মায়ের মুখ দেখে কাটাতে চাই। তুমি চাইলে নিজে শীতল ক্যাপসুলে ঘুমিয়ে পরো যাও!",রাগী স্বরে বলল রিবি।
গিমিস যেন কথাটায় মজা পেল। সে যান্ত্রিক একটা হাসি হাসলো। কে জানে সেটা রিবির কাছে হাসির মত শোনালো কিনা!
Comments
Post a Comment