খুনী
রেহানের ভ্রু কুচকে আছে। কিছুতেই সে এ ঘটনার সুরাহা করতে পারছে না। রাজধানীর মহাখালীর একটা বাসায় এক বেসরকারি কর্মকর্তা খুন হয়েছে। পুলিশ রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে ডিবি পুলিশের কাছে কেইসটা হস্তান্তর করে। সেই কেইস এসে পরেছে ডিবি অফিসার রেহানের ওপর। কিন্তু চিন্তার বিষয় হল খুনী যেই হোক সে কোন ক্লু রেখে যায় নি।এটা সাধারণত হয় না। খুনী কোন না কোন ক্লু রেখে যায় যা ধরে গোয়েন্দারা কেইসের সুরাহা করে। কিন্তু এই একটা জায়গায় এসে সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।
খুনটা হয় মঙ্গলবার রাতে। প্রতিবেশীদের জেরা করে জানা গেল যে মঙ্গলবার রাতে জাহিদ সাহেব অর্থাৎ যিনি খুন হয়েছেন তিনি তার এক বন্ধু কে নিয়ে বাসায় আসেন। কিন্তু শীতকাল ছিল এবং তার বন্ধুর মুখ মাফ্লারে ঢাকা ছিল বলে কেউ তার চেহারা দেখে নি। এমন কি গেটে থাকা দারোয়ান তাই বলল।
সে রাতে জাহিদ সাহেবের ফ্ল্যাটে একজনই এসেছিলেন। নিশ্চয় তার অফিসের কোন সহকর্মী কিংবা তার কোন বন্ধু বা কেউ। জাহিদ সাহেবের পরিবার সেরাতে ছিল না। পরিবারের সবাই গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিল। তিনি সে রাতে খুনী ব্যাক্তিটি(সম্ভাব্য) নিয়ে ঘরে আসেন এবং অনেক রাত পর্যন্ত তাস খেলেন। সম্ভবত খেলার কোন ব্যাপার কিংবা জুয়ারী কোন ব্যাপারে তার অপনেন্ট রেগে গিয়েছিল। তাই সামনে থাকা ফ্লাওয়ার ভাস দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে এবং তার মৃত্যু ঘটে। আঘাতটা গুরুতর না। তার মৃত্যু ঘটেছে অতিরিক্ত ব্লীডিং এর ফলে। কিন্তু চিন্তার বিষয় হল খুনীর কোন আঙ্গুলের ছাপ ফ্লাওয়ার ভাসে নেই। শীতকাল বলে হয়তো হাতে গ্লাভস পরে ছিল। জাহিদ সাহেবের স্ত্রীর কাছ থেকে জেনেছেন যে, জাহিদ সাহেব মাঝে মাঝেই অফিসেরর কিছু লোক নিয়ে আসেন এবং তাদের সাথে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দেন। এ নিয়ে ওনার স্ত্রীর সাথে বেশ কথা কাটাকাটিও হয়। কারন তিনি নাকি রীতিমত জুয়া খেলা শুরু করেছিলেন। খুনটা কি তাদের মধ্যে কেউ করেছে? সম্ভাবনাই বেশি।
রেহান জাহিদ সাহেবের অফিসের সবাইকে জেরা করেন। তাতে বিশেষ লাভ হয় নি। বেশ কিছু মানুষ এত নার্ভাস হয়ে গিয়েছিল যে ধরাই মুশকিল হয়ে গিয়েছিল কে করেছে খুনটা। তবে এতটুকু জানতে পেরেছেন অফিসের তিনজন কর্মকর্তা বেশ নিয়মিতই জাহিদ সাহেবের সাথে তাস খেলতে বাসায় যেতেন। এ কথা অবশ্য অন্য কোন ক্লায়েন্ট জানায় নি জানিয়েছে অফিসের পিওন, সে তিনজনের নাম বলেছে। কিন্তু সে তিনজনের মধ্যে একজন যে খুনী তার প্রমান কি?
ঘটনাস্থলে দাড়িয়ে এসব কথাই ভাবছিলেন রেহান। ইদানিং তার সর্দি লেগেছে। বার বার নাক মোছেন। এসব ভাবতে ভাবতে পকেট থেকে রুমাল বের করে নাক মুছতে গিয়ে হঠাৎ একটা জিনিস তার চোখে পরে।আশ্চর্য এ জিনিস এতক্ষণ পরোয়াই করেনি সে!
তিনি ফোন করলেন জাহিদ সাহেবের কলিগ সোবহান সাহেবকে। বিকেলে সোবহান সাহেব ডিবি কার্যালয়ে হাজির।
রেহান তাকে দেখে বললেন, বসুন বসুন! আপনার জন্যই অপেক্ষা করে আছি।
'কি ব্যাপার বলুন তো! কোন কূল কিনারা করলেন?'
'কুল কিনারা আমাদের করতে হয় না সোবহান সাহেব, সেটা খুনী নিজেই করে দিয়ে যায়! আমাদের শুধু সেটা খুজতে হয়।' মৃদু হেসে জবাব দিল রেহান। রেহানের কথা শুনে যেন একটু বিচলিত হয়ে গেল সোবহান সাহেব। আমতা আমতা করে বলল,'আপনারা খুনী ধরে ফেলেছেন?'
'হাতে নাতে!'
'ক...ক..কে সে?'
'আবার দেখিয়ে দিতে হবে নাকি? তার নাম সোবহান রহমান.'
এটা শুনে সোবহান সাহেব উত্তেজিত হয়ে চেয়ার থেকে দাড়িয়ে গিয়ে চিৎকার করে উঠলেন,' হাউ ডেয়ার ইউ! আপনি আমাকে ফাসাতে চাইছেন? কি প্রমান আছে যে আমিই খুন করেছি?'
রেহান বলল, ধীরে ধীরে, প্রমান আপনি খুব একটা রাখেননি আমি জানি। কিন্তু অপরাধ বিজ্ঞানের একটা থিওরি বোধহয় আপনার জানা নেই। খুনী যতই সাবধান হোক না কেন, কোন না কোন ক্লু সে রেখে যাবেই। আপনিও রেখেছেন সোবহান সাহেব। আপনি গ্লাভস পরে ছিলেন তাই আপনার কোন ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায় নি, কিন্তু সবচেয়ে বড় যে ভুলটা করলেন তা হল আপনি টিস্যু দিয়ে নাক মুছেছেন। সেই টিস্যু আমরা ডাস্টবিন থেকে সংগ্ররহ করে ডিএনএ টেস্ট করে দেখি যে সেটা জাহিদ সাহেবের নয়। আর টিস্যুটা ব্যবহার করা হয়েছিল খুনের কিছুটা আগে। তার মানে ব্যবহার করেছিল খুনী নিজেই।'
'কি প্রমান যে সে টিস্যু আমিই ইউজ করেছি?'
'হাসালেন মিস্টার সোবহান, ডিবি কখনও প্রমান ছাড়া কথা বলে না। আপনাকে জেরা করার জন্য থানায় ডেকেছিলাম মনে আছে? তখন আপনাকে চা খেতে দিয়েছিলাম আপ্যায়ন করার জন্য নয়, চায়ের কাপ থেকে আপনার আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার জন্য। শুধু আপনার ক্ষেত্রে নয় অফিসের সব কর্মকর্তার ক্ষেত্রে আমি এই কৌশলটা অবলম্বন করেছি। আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকে পাওয়া ডিএনএ আর ব্যবহৃত টিস্যুর ডিএনএ যে মিলে গেছে সোবহান সাহেব।'
সোবহান সাহেব চুপ করে আছেন। তার মুখ লাল হয়ে গেছে।
রেহান বলল, খুনটা কেন করেছেন সেটা পরে জানা যাবে। আপাতত আপননি হাজত বাসী। ইউ আর আন্ডার এরেস্ট মিস্টার সোবহান!'
............

Comments
Post a Comment