Posts

রসুলপুর স্টেশন

Image
  দিনের প্রথম ট্রেনটা স্টেশন ছেড়ে চলে যায় খুব ভোরে। তারপরই কেমন যেন এক আলসেমি ভর করে রসুল্পুর স্টেশনে। আচ্ছা, এই স্টেশনটার নাম রসুল্পুর কেন? কেউ কি ভেবে দেখেছে সে কথা? ভাবেনি। এই গ্রামের মানুষজন খুবই সরল। এসব চিন্তা তাদের মাথায় ধরে না। তারা শুধু জানে দিনে দুই বার একটা ট্রেন শহরে চলে যায় আবার ফিরে আসে। বাকি সময় তারা স্টেশনের পাশের বাজারে বসে আড্ডা দিয়ে সময় কাটায়। এসব ভাবার কথাও না তাদের। এসব ভাবে একজন। তার নাম অনু। কয়েক বছর হল সে এই গ্রামে বউ হয়ে এসেছে। সেই থেকে দেখছে এই গ্রামের মানুষজনের জীবন খুবই সরল রেখায় চলে। অনেকটা সেই ট্রেনের মত। লাইনের বাইরে যায় না। সে সারাদিন বসে এসব ভাবে। আর ভাবে শিমুলের কথা। শিমুল তার স্বামী। সে শহরে থাকে। মাঝে মাঝে সেই ট্রেনটা চড়ে আসে বাড়িতে। তাও বছরে এক কি দু’বার। তবে অনুকে সে ফোন করে। অনুর নিজের ফোন নেই। বাজারে সেলিম ভাইয়ের দোকানে ফোন আছে সেটায় ফোন করে। সেলিম ভাই দৌড়ে আসে ফোন নিয়ে আর চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘শিমুল ভাইয়ের ফোন… শিমুল ভাইয়ের ফোন।“ অনুর ভীষণ রাগ হয়, লজ্জাও করে। এভাবে পুরো গ্রাম জানিয়ে আসার কি আছে? তার ইচ্ছে হয় শিমুলকে বলে তাকে যেন একটা ফো...

খুনী

Image
 রেহানের ভ্রু কুচকে আছে। কিছুতেই সে এ ঘটনার সুরাহা করতে পারছে না। রাজধানীর মহাখালীর একটা বাসায় এক বেসরকারি কর্মকর্তা খুন হয়েছে। পুলিশ রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে ডিবি পুলিশের কাছে কেইসটা হস্তান্তর করে। সেই কেইস এসে পরেছে ডিবি অফিসার রেহানের ওপর। কিন্তু চিন্তার বিষয় হল খুনী যেই হোক সে কোন ক্লু রেখে যায় নি।এটা সাধারণত হয় না। খুনী কোন না কোন ক্লু রেখে যায় যা ধরে গোয়েন্দারা কেইসের সুরাহা করে। কিন্তু এই একটা জায়গায় এসে সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। খুনটা হয় মঙ্গলবার রাতে। প্রতিবেশীদের জেরা করে জানা গেল যে মঙ্গলবার রাতে জাহিদ সাহেব অর্থাৎ যিনি খুন হয়েছেন তিনি তার এক বন্ধু কে নিয়ে বাসায় আসেন। কিন্তু শীতকাল ছিল এবং তার বন্ধুর মুখ মাফ্লারে ঢাকা ছিল বলে কেউ তার চেহারা দেখে নি। এমন কি গেটে থাকা দারোয়ান তাই বলল। সে রাতে জাহিদ সাহেবের ফ্ল্যাটে একজনই এসেছিলেন। নিশ্চয় তার অফিসের কোন সহকর্মী কিংবা তার কোন বন্ধু বা কেউ। জাহিদ সাহেবের পরিবার সেরাতে ছিল না। পরিবারের সবাই গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিল। তিনি সে রাতে খুনী ব্যাক্তিটি(সম্ভাব্য) নিয়ে ঘরে আসেন এবং অনেক রাত পর্যন্ত তাস খেলেন। সম্ভবত খ...

নির্বাসন

Image
স্মৃতির ভারে নুয়ে ছিলো দুটি হাত তবুও পারিনি ছুঁয়ে দিতে ভেজা চোখ- সাদাকালো আমাদের দিনগুলি মুছে যাক যা কিছু কালো আমারই নাহয় হোক। দূরত্ব আমাদের আকাশও খুঁজে ফেরে ভুলে যাই ক্ষণ, যোগাযোগ ছিলো যখন- কালো মেঘে আঁধার, চোখজুড়ে লোনা জল অশ্রুরা জানে কান্নার নির্বাসন।। তবুও দুটি হাত একটু স্পর্শ খোঁজে চোখেরা খোঁজে খুব চেনা কোন আঁখি- বুকের ভেতর বাবুই পাখির বাসা চোখের ভেতর অশ্রু-লোনা, দুহাত আগলে রাখি! ছায়া খুঁজে ফেরে পথ চলার কেউ এ মন খোঁজে নিজের মত এক মন- এই শহর জানে কতখানি আমি একা এই শহরেই আমার নির্বাসন! _শহুরে কবি

প্রশ্ন

Image
  আর কিছুক্ষণ পরই নতুন সূর্য উঠবে। নতুন একটি দিন শুরু হবে। রাতের অন্ধকার মুছে দিয়ে সূর্য তার কোমল আলোয় প্রভাতকে আলোকিত করে দিবে। কিন্তু সেই আলোয় আলোকিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়তো আমার হবে না। এই ডায়রির আর কোন পাতায় তোমাকে নিয়ে আর কিছু লিখব না। এই ডায়রিটা তুমিই আমাকে দিয়েছিলে, মনে পড়ে? বলেছিলে শুধু তোমাকে নিয়ে যেন লিখি ডায়রিতে। আমি তোমার কথা রেখেছি। মোটা এই ডায়রির প্রতিটা পাতায় তোমাকে নিয়ে লিখেছি। কিন্তু তোমাকে পড়তে দেইনি কোনদিন। ভেবেছিলাম সবগুলো পাতা শেষ হয়ে গেলে ডায়রিটা তোমাকেই উপহার দিব। কিন্তু সেই সুযোগ তুমি দাওনি। যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম আজও সেদিনের কথা মনে পড়ে। তুমি ক্যাম্পাসের বাইরের বাগানটায় বসে ছিলে। কাছ দিয়ে হেঁটে গেছি কিন্তু কথা বলার সাহস হয়নি। সেদিন তোমার সাথে কথা বলার জন্য অজানা এক কারনে মনটা কি পরিমাণ ব্যাকুল হয়েছিলো তা তুমি জানলে না। কথা বলার সুযোগ আরেকদিন পেয়েছিলাম লাইব্রেরীতে। সেই প্রথম তোমার সাথে কথা বলা। তারপর এক এক করে প্রতিটি দিন। পার্কের রাস্তায় পাশাপাশি হাঁটা থেকে শুরু করে ক্যাফেতে বসে কফি খাওয়া, প্রতিটা মুহূর্ত আমার মনে আছে। শুধু যে মনেই আছে টা না। প্রতি...

১০ নং গলির মোড়ে

Image
 দাঁড়িয়ে থাকা একলা পথে বাড়িয়ে দিও হাত ছোট্ট বুকে বসত গড়া দীঘল কালো রাত- ভোরের আশায় ক্ষণ গুনে যায়, ক্লান্ত আমি বড় বলবো তোমায়, বলতে গিয়ে শব্দ জড়সড়।। একলা আকাশ, বিষন্ন দিন, একটি পাখি একা বাক্স-বন্দি দুঃখ নিয়ে- আমার ভালো থাকা। তোমার জন্য সন্ধ্যে আঁকি, তোমার জন্য গাই সুরগুলো সব তোমায় নিয়েই, আমার জন্য নাই। তোমার জন্য রাত্রি নামাই, তোমার জন্য লিখি ভোরের আলোয় মাখিয়ে তোমায়, আঁধার নিয়ে থাকি। বুক পকেটে দুমড়ে যাওয়া একটি হলুদ খাম কেউ নাহয় নাই বা জানুক তাতে তোমার নাম। চিঠির পাতা আজও সাদাই, লেখা হয়নি কিছু 'স্মৃতি' নামক তোমার ছায়া আমার পিছু পিছু।। লোডশেডিং এর এই শহরে একটি নিয়ন বাতি বড্ড একা, ঠাঁই দাঁড়িয়ে, নিকষ সারারাতি। আমিও সেই বাতির মতই, শহর আমার খাঁচা পাখির মত জীবন নিয়ে মরার মত বাঁচা। খাঁচার পাল্লা খুলবে যেদিন, আকাশ বহুদূরে... আমার শহরটাকে তোমায় দিয়ে, আমিই যাব উড়ে।। _শহুরে কবি

হিসাব

Image
 পথে হেঁটে ক্লান্ত ভীষণ আমি শ্রান্ত ভীষণ রৌদ্র পোড়া দেহ- এক সমুদ্র কান্না জমা বুকে, কেউ দেখেনি, রাখেনি হিসেব কেহ।। বিষাদের মত নিষাদের সুর গুনি ভাসা ভাসা সব স্মৃতিময়তার মোহ- দুহাতে জড়ানো কতশত অপরাধ দেখেনি ছুঁয়ে, রাখেনি হিসেব কেহ।। আঁধারের মাঝে আমি তব একা চলি ছিলো কি কেউ? ছিলো শুধু সন্দেহ, মাথা নুয়ে কত চোখ বুজে সয়ে নিলাম রাখেনি হিসেব, জানেনি কোনদিন কেহ।। শহরটা জানে আর জানে সড়ক বাতি দেয়ালে জমানো কত সহস্র অজুত পাপ- ধুয়ে মুছে সব হারাবো যেদিন আমি জানবে না কেউ, থাকবে না কোন হিসাব।। _শহুরে কবিপথে হেঁটে ক্লান্ত ভীষণ আমি শ্রান্ত ভীষণ রৌদ্র পোড়া দেহ- এক সমুদ্র কান্না জমা বুকে, কেউ দেখেনি, রাখেনি হিসেব কেহ।। বিষাদের মত নিষাদের সুর গুনি ভাসা ভাসা সব স্মৃতিময়তার মোহ- দুহাতে জড়ানো কতশত অপরাধ দেখেনি ছুঁয়ে, রাখেনি হিসেব কেহ।। আঁধারের মাঝে আমি তব একা চলি ছিলো কি কেউ? ছিলো শুধু সন্দেহ, মাথা নুয়ে কত চোখ বুজে সয়ে নিলাম রাখেনি হিসেব, জানেনি কোনদিন কেহ।। শহরটা জানে আর জানে সড়ক বাতি দেয়ালে জমানো কত সহস্র অজুত পাপ- ধুয়ে মুছে সব হারাবো যেদিন আমি জানবে না কেউ, থাকবে না কোন হিসাব।। _শহুরে কবি

কথা ও আকাশ

Image
  এভাবে কাটুক দিন, ক্লান্ত তালে ভাঙা চালে জোৎস্না ঝড়া ঋণ। কাটুক নাহয় বেলা বুক ছুঁয়ে যায় কাঁটার আঁচড় তোমার অবহেলা! বর্ষা ঝড়ায় জল আমার ছায়ায় তোমার ছায়া, নিখোঁজ হবার ছল! অচীন পাখির ডাক গহীন বনের কোন সে আড়াল থাক সে ভালো থাক।। বর্ষা নিলো বিদায় তোমার আঙুল যার আঙুলে, সে কি- আমার মতই কাঁদায়? হঠাৎ করেই কালো সবকিছুই নিছক মেকি বেসেছিলাম যা ভালো। পথ চলতে ভয় চোখের কোণে অশ্রু আমার, অশ্রু মিথ্যে হয়? মনের ভেতর আবারও এক অচীন পাখির ডাক অশ্রু মুছে বলি মনে, 'থাক সে ভালো থাক'।। _শহুরে কবি